Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

প্রখ্যাত ব্যাক্তিত্ব

মহারাজা প্রাণনাথ: 

দিনাজপুর রাজবংশের ঘটনাবহুল ইতিহাসে রাজা প্রাণনাথ (১৬৮২-১৭২২) এবং রাজা রামনাথ (১৭২২-১৭৬০) ছিলেন সামন্ত-শ্রেষ্ঠ রাজা। এদের আমলেই দিনাজপুর জমিদারী সর্বাধিক বিস্তৃত ও খ্যাতি লাভ করে। সক্ষম বিজেতা ও দক্ষ শাসক হিসেবে এই বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন প্রাণনাথ। এই রাজার আমলেই বাংলার স্থাপত্য-শ্রেষ্ঠ কান্তজিউ মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু হয়। রাজা প্রাণনাথের চেয়ে ঐতিহাসিক স্মরণীয় ছিলেন তৎপুত্র রাজা রামনাথ। এই রাজার আমলেই কুখ্যাত বর্গীর হাঙ্গামার ফলে দক্ষিণ ও পশ্চিম বঙ্গের উপর দিয়ে চরম বিপদ ও বিপর্যয়ের ঝড় বয়ে যায়। কিন্তু রাজা রামনাথের বীর বিক্রমের ফলে বর্গী দস্যুরা উত্তরবঙ্গে পদার্পণ করতে সাহসী হয় নাই। রাজা রামনাথের অমর স্মৃতি বহন করে বাংলার স্থাপত্য-শ্রেষ্ঠ কান্তজিউ মন্দির ও সাগরোপম বিশাল দীঘি রামসাগর। ১৭৫২ খৃষ্টাব্দে রাজা রামনাথ কর্তৃক কান্তজিউ মন্দির নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়।

 

 

রাজা রামনাথ  (১৭২২-৬০):

প্রায় বিয়াল্লিশ বৎসর দিনাজপুরের মহারাজ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এই সুদীর্ঘ সময়ে তিনি বাংলার রাজনৈতিক পরিবর্তন সহ বহু ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছিলেন। উত্তরবঙ্গের হিন্দু রাজ্যগুলির মধ্যে অন্যতম নাম হল দিনাজপুর । গৌড়েশ্বর গনেশনারায়ণ এর শাসনকালে (১৪১৪-১৪১৮ খ্রি:) তাঁর অন্যতম রাজকর্মচারী রাজা দিনরাজ ঘোষ কর্তৃক এই রাজ্য প্রতিষ্ঠা হয় । দিনরাজ ঘোষ ছিলেন উত্তর রাঢ়'র কুলীন কায়স্থ । রাজা দিনরাজ এর নাম থেকেই রাজ্যের নাম হয় 'দিনরাজপুর', যা বারেন্দ্র বঙ্গীয় উপভাষার পরিবর্তিত হয়ে হয় দিনাজপুর । গৌড় সংলগ্ন সনাতনী রাজ্য দিনাজপুর পাঠান, মুঘল ও নবাবদের বহু যুদ্ধে পরাস্ত করে চিরকাল ধর্মরক্ষা করে এসেছে । 
দিনাজপুরের মহারাজা প্রাণনাথ রায়'র শাসনকালে রাজ্যের ক্ষমতা প্রভূত বৃদ্ধি পায় । মুঘল সাম্রাজ্যের অন্তর্দ্বন্দ্ব'র সুযোগে তিনি তার প্রতিবেশী মুঘল অধিকৃত অঞ্চলের জমিদার ও তালুকদারদের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ করে নিজের রাজ্যের পরিধি বাড়িয়ে নিয়েছিলেন । তাঁর চল্লিশ বছরের শাসনকালে দিনাজপুর রাজ্য বাংলার প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। নবাব মুর্শিদকুলী খাঁর পর মুর্শিদাবাদের নবাব রূপে মসনদে বসেন শুজাউদ্দীন মুহম্মদ খাঁ । ১৭৩৩ খ্রিস্টাব্দে বিহার প্রদেশ বাংলা নবাবি'র সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল। এই সময় শুজাউদ্দীন ঢাকায় এবং বিহার ও উড়িষ্যা শাসনের জন্য আরও দুইজন নায়েব নাজিম নিযুক্ত করেছিলেন। এদিকে ১৭২২ খ্রিস্টাব্দে দিনাজপুরের রাজা প্রাণনাথ মারা গেলে তাঁর উত্তরাধিকারী রাজা রামনাথ রায় রাজসিংহাসনে বসেন । ক্ষমতায় এসে রাজা রামনাথ পতিরাম, পত্নীতলা ও গঙ্গারামপুর অঞ্চল অধিকার করেন । এরপর তিনি গৌড়ের পথে মালদহের চাঁচল, খরবা ও গাজোল পরগনা অধিকার করতে থাকেন । সামগ্রিকভাবে তাঁর রাজ্যের আয়তন ও সামরিক ক্ষমতা প্রভূত বৃদ্ধি পায় ।
রাজা রামনাথের বিরাট ক্ষমতা ও ঐশ্বর্য দেখে নবাব সুজাউদ্দিন অত্যন্ত শঙ্কিত হয়ে পড়েন । তিনি রংপুরের নব নিযুক্ত মুঘল ফৌজদার সৈয়দ মহম্মদ খাঁ কে দিনাজপুর আক্রমণ ও দখলের আদেশ দেন । সৈয়দ মহম্মদ খাঁ'ও রামনাথ এর ক্ষমতার প্রতি ঈর্ষান্বিত ও ক্ষুব্ধ ছিল । কথিত যে, সৈয়দ মহম্মদ খাঁ এক বিশাল সেনাবাহিনী সঙ্গে নিয়ে দিনাজপুর শহরে নিকটবর্তী রাজবাড়ি আক্রমণ ও লুঠ করতে এগিয়ে আসেন। অমিত ক্ষমতাশালী রাজা রামনাথও এক বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে এগিয়ে চললেন সৈয়দ মহম্মদ খাঁ ও তার নবাবি সৈন্যবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করতে। দুপক্ষের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয় । দিনাজপুর সৈন্যবাহিনী'র পরাক্রমে নবাবী সেনা কার্যত ধূলিসাৎ হয়ে যায় । সৈয়দ মহম্মদ খাঁ পরাজিত হয়ে শেষ পর্যন্ত রাজা রামনাথের হাতে বন্দী হলেন। 
রাজা রামনাথ (১৭২২-৬০) প্রায় বিয়াল্লিশ বৎসর দিনাজপুরের মহারাজ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এই সুদীর্ঘ সময়ে তিনি বাংলার রাজনৈতিক পরিবর্তন সহ বহু ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছিলেন। তার সময় বাংলায় অত্যাচারী বর্গী আক্রমণ ঘটে । বর্গীদের ভয়ে লোকেরা ভাগীরথীর পূর্বদিকে পালিয়ে যেতে লাগল। ১৭৪২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭৫১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রতিবছর বর্গীরা বাংলায় এসে গ্রাম ও নগর আক্রমণ করে লুণ্ঠন, ধর্ষণ, অত্যাচার ও উৎপীড়ন করেছিল বাংলার মানুষের উপরে। 
বরেন্দ্রভূমিতে বর্গী আক্রমণ সফলভাবে প্রতিহত করেন দিনাজপুরের রাজা রামনাথ রায় । তিনি রাজ্যের সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রতিরক্ষার জন্য রাজা ১০টি কামান নিযুক্ত করেছিলেন বলে কথিত। দিনাজপুরের পরাক্রমে অত্যাচারী বর্গীরা মুর্শিদাবাদ পার করে ঢুকতে পারেনি, ফলে বর্গীরা দিনাজপুর, মালদহ, রাজশাহী, রংপুরে তেমন কোনও তৎপরতা চালাতে পারেনি ও এসব অঞ্চল বর্গী অত্যাচারের বীভৎসতা থেকে রক্ষা পায় ।